বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ: এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং [ESE Subject Review]

র্তমান বিশ্বে বহুল চর্চিত ‘পরিবেশ’ শব্দটির সঙ্গে এখন মানুষকে আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। কারণ বর্তমান বিশ্বে এ শব্দটি প্রতিটি নাগরিকের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তাসহ সর্বোপরি দেশের জন্য একটি অপরিহার্য শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে এই বোধোদয় সঞ্চার হতে কালক্ষেপণ হয়ে গেছে, যা আমাদের এই পৃথিবীকে রীতিমতো গুরুতর অসুস্থ করে তুলেছে!

এখন মানুষ বুঝতে পারছে যে শুধু ইনডিভিজুয়ালিটি নিয়ে থাকলে আসলে পরিপূর্ণ ভালো থাকা যায় না। সম্পূর্ণরূপে ভালো থাকতে হলে সামগ্রিকভাবে চারপাশে সবাইকে নিয়েই ভালো থাকতে হয়। এই সামগ্রিকভাবে ভালো থাকার প্রধান উপাদান হচ্ছে পরিবেশ। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের বাংলাদেশের পরিবেশের প্রতিটি নিয়ামকের সূচক অত্যন্ত নিম্নমুখী! এর জন্য দায়ী আমাদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তাধারা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা। উন্নত বিশ্ব যেখানে বিশ শতকের মাঝামাঝি এই পরিবেশবিজ্ঞান বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে, সেখানে আমাদের দেশে এর গুরুত্ব বুঝতে আরও ৫০ বছর সময় বেশি লেগেছে। যার মাধ্যমে আমাদের দেশের চরম ক্ষতি সাধিত হয়েছে। 

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি খুব একটা পুরোনো নয়। গত শতকের একদম শেষের দিকে এসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগটি প্রথম স্থাপিত হয়। এর পর থেকেই আমাদের দেশে পরিবেশ নিয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তাটা সামগ্রিক রূপ পেতে শুরু করে। এখন দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগটি স্থাপিত হয়েছে। আর বাংলাদেশের প্রথম ২০১৬ এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটি প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। একই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে বুটেক্সেও (BUTEX) একই নামে একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়, যেটি মূলত টেক্সটাইল শিল্পের দূষণ এবং এর প্রতিকার নিয়ে কাজ করে।

মাল্টিডিসিপ্লিনারি সাবজেক্ট

এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটি শুধু কোনো নির্দিষ্ট একটি ডিসিপ্লিন নিয়েই পড়ানো হয় না; বরং এটি একটি ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি প্রফেশনাল অ্যাপ্রোচ’। এই সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করতে অথবা গবেষণা করতে চাইলে নানাবিধ জ্ঞান থাকতে হয়; যেমন পদার্থ, গণিত, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, ভূগোল, অণুজীববিজ্ঞান, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড সেফটি, হাইড্রোলজি প্রভৃতি বিষয়ের। এক কথায় বলতে গেলে ভূ-অভ্যন্তরের কোর থেকে শুরু করে মহাশূন্যের এক্সট্রা-টেরিস্টোরিয়াল অবজেক্ট পর্যন্ত এই সাবজেক্টের শিক্ষার এবং গবেষণার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

পরিধি

এইসাবজেক্টটিকে যেমন কোনো নির্দিষ্ট একটি সাবজেক্টে বেঁধে ফেলা যায় না, ঠিক তেমনি এর কর্মপরিধিও অনেক বিশাল। পরিবেশ বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী ছাড়াও বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ দপ্তর, বন ও পরিবেশ বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পানিসম্পদ বিভাগ, নদী ও সমুদ্র গবেষক হিসেবে, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে (NASA, SPARSO), ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউনিসেফের বিভিন্ন প্রজেক্টে, বিভিন্ন এনজিও প্রভৃতিতে। 

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা

একজন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্টিস্ট বা ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা ও বেতন দুটোই বিশ্বে প্রথম সারির পেশাগুলোর মধ্যে অন্যতম। উচ্চশিক্ষা ও যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ পেশায় খুব সহজেই নিজের ক্যারিয়ারের উন্নতি করা যায়। আর উন্নত বিশ্বে এই বিভাগের উচ্চ চাহিদার কথা মাথায় রেখেই উচ্চশিক্ষার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ, ফেলোশিপ ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা। যেগুলোতে কোয়ালিফাই করতে হলে ছাত্রজীবনে একটু অধ্যয়ন ও গবেষণায় মনোযোগী হওয়ার সদিচ্ছাই যথেষ্ট। 

পরামর্শ

পরিবেশ নিয়ে আমাদের চিন্তা করার কথা ছিল অনেক আগেই কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা না করতে পারার কারণে আমাদেরই পৃথিবীটা চরমভাবে অসুস্থ হয়ে গেছে। আর সব থেকে মজার ব্যাপার হলো, এই অসুস্থ পৃথিবী চিকিৎসার দায়িত্ব এসে পড়েছে সায়েন্টিস্ট ও ইঞ্জিনিয়ারদের ওপর! তাই এই বিভাগটিতে অধ্যয়ন করে আপনিও এগিয়ে আসুন বিশ্ব তথা মানবকল্যাণে। 

লিখেছেনঃ এস বিপুলেন্দু বসাক, সহকারী অধ্যাপক, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পোস্টটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছেঃ আজকের পত্রিকায়

Tags: ESE Subject Review, Environmental Science and Engineering Subject Review, পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ সাবজেক্ট রিভিও, ইএসই সাবজেক্ট রিভিও, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট রিভিও।